আদেশ কিংবা রায় পক্ষগণের উপস্থিতিতে প্রকাশ্য আদালতে প্রদান করতে হবে- হাইকোর্ট।
“দুর্নীতি দমন কমিশন বনাম পার্থ গোপাল বনিক এবং অন্যান্য” (ফৌজদারী আপীল নং-৪৬৮৮/২০২১) আপীলে গত ২৬/০৮/২০২১ইং তারিখে শুনানী শেষে বিচারপতি জনাব এম. ইনায়েতুর রহিম এবং বিচারপতি জনাব মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান গত ০২/০৯/২০২১ইং তারিখে একটি গুরুত্বপূর্ণ রায় প্রদান করেছেন।
বিচারপতিদ্বয় তাদের রায়ে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন— “স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নিম্ন আদালতসমূহের বিজ্ঞ বিচারকের জামিনসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ন অন্তবর্তী আদেশ ও রায় প্রকাশ্য আদালতে সংশ্লিষ্ট পক্ষগণ বা তাদের আইনজীবীদের উপস্থিতিতে ঘোষণা করার নির্দেশ দেয়া হলো।”
এই ফৌজদারী আপীলটির পেছনের গল্প- ২০১৯ সালের ২৭ জুলাই কারা উপ-মহাপরর্দিশক (ডিআইজি প্রিজন্স) পার্থ গোপাল বণিক চট্টগ্রামে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তখন তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত ৮০ লাখ টাকা অর্জন করেন। সেই টাকা পার্থ গোপাল বণিক তার নিজ বাসার ক্যাবিনেটে লুকিয়ে রাখেন। অনুসন্ধানকালে অভিযান পরিচালনা করে তার বাসা থেকে ওই টাকা জব্দ করেন দুদক। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় হাইকোর্টে একাধিকার জামিন চেয়েও জামিন পাননি ডিআইজি পার্থ গোপাল বণিক। কিন্তু, গত ১৯ জুন জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় সাময়িক বরখাস্ত হওয়া পার্থ গোপাল বণিককে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক ইকবাল হোসেন ১০ হাজার টাকা মুচলেকায় জামিন প্রদান করেন।
পরবর্তীতে, ডিআইজি প্রিজন্স পার্থ গোপাল বণিককে অস্বাভাবিকভাবে জামিন দেওয়ার বিষয়টি হাইকোর্টের নজরে আনেন একজন আইনজীবী। এছাড়া তার জামিন স্থগিত চেয়ে আবেদন করে দুদক।
রায়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশ
হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক ফৌজাদারী রিভিশন মামলা নং-১৪৫/২০২১ এ প্রদত্ত ২৫/০১/২০২১ইং তারিখের আদেশ হতে প্রতিয়মান যে, আসামী তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের বিরুদ্ধে উক্ত রিভিশন মামলাটি দায়ের করলে উপস্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ হয়। কিন্তু হাইকোর্ট বিভাগের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ বিচারিক আদালতকে আদেশ প্রাপ্তির ০১ (এক) বছরের মধ্যে বিচার কাজ সমাপ্ত করার নির্দেশ প্রদান করে।
চ্যানেল-২৪ এর প্রতিবেদন হতে এবং বিজ্ঞ আইনজীবীদের বক্তব্য হতে এটা সুস্পষ্টভাবে প্রতিয়মান যে, জামিন দরখাস্তটি শুনার পর বিজ্ঞ বিচারক তাৎক্ষনিক ভাবে প্রকাশ্য আদালতে কোন আদেশ প্রদান করেননি, যা সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞ আইনজীবীগণ কর্তৃক স্বীকৃত; এবং আদেশটি অতিগোপনে কারা কর্তৃপক্ষের নিকট প্রেরণ করা হয়, যা সংশ্লিষ্ট পক্ষের বিজ্ঞ আইনজীবীরাও জ্ঞাত ছিলেন না। এ ধরনের ঘটনা হতাশা ও লজ্জাজনক এবং আইনের সাথে সংগতিহীন। ফৌজদারী কার্যবিধির ধারা ৩৬৬ এবং ক্রিমিনাল রুল্স এ্যান্ড অর্ডাস (প্রাক্টিস এ্যান্ড প্রসিকিউটর অফ্ সাব-অর্ডিনেট কোর্টস), ২০০৯ রুল ১৭৯(২)-এ সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে ‘রায়’ প্রকাশ্য আদালতে সংশ্লিষ্ট পক্ষদের উপস্থিতিতে প্রদান করতে হবে। যদিও আইন ও বিধিতে ‘রায়’ শব্দটি উল্লেখ রয়েছে, কিন্তু আইন ও বিধির মর্ম হলো গুরুত্বপূর্ন যে-কোন বিষয়ে আদালতের আদেশ/সিদ্ধান্ত প্রকাশ্য আদালতে প্রদান করতে হবে। তর্কিত আদেশ প্রদানের প্রক্রিয়া নানান প্রশ্নের সুযোগ করে দিয়ে বিচার বিভাগকেও বিতর্কিত করেছে।
স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নিম্ন আদালতসমূহের বিজ্ঞ বিচারকের জামিনসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ন অন্তবর্তী আদেশ ও রায় প্রকাশ্য আদালতে সংশ্লিষ্ট পক্ষগণ বা তাদের আইনজীবীদের উপস্থিতিতে ঘোষণা করার নির্দেশ দেয়া হলো।